নভেল করোনা ভাইরাসের ইতিহাস_ ‘ ভয় নয়, সচেতনতাই জয় – স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, নিরাপদ পরিবেশ বলয় গড়ে তুলুন – ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ‘ ঘুম থেকে উঠেই টিভির প্রধান সংবাদ শিরোনামে এমন বহুতর জরুরি সতর্কবার্তা ও বিপদসংখেত আমরা প্রতিনিয়ত শুনছি, জানছি এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটতে দেখছি। উপরন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Org- WHO) বিগত ২০২০ সালের ১১ মার্চ বৈশ্বিক মহামারীর (COVID-19 Pandemic) বিপদসংখেট জানানোর ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ঘটে ছন্দপতন। আকস্মিক স্থবির হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব, স্তম্ভিত পৃথিবীর মানুষ। এইবার আসি করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে…..করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মাসে; এটি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান নগরে প্রথম সনাক্ত করা হয়। এর পর ১১ জানুয়ারি ২০২০ প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয় উহান নগরের হুয়ানান সামুদ্রিক খাদ্যের পাইকারি বাজারে খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি জীবন্ত বাদুর, সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী থেকে মধ্যবর্তী কোনো পুষকে বিবর্তিত হয়ে বা ঘটনাচক্রে মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর উহানে অজানা কারণে আক্রান্ত নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে চিনা বিজ্ঞানীরা ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি এটিকে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস হিসেবে ঘোষণা দেন এবং এর বংশানক্রমিক বা জিনোমের তথ্যগুলো বিশ্বব্যাপি বিজ্ঞানী, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের কাছে বিতরণ করেন। ঠিক কিভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল টা নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভের অন্তর্বর্তী সময়ে এশিয়ার কিছু অঞ্চলসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ইউরোপে মহামারী আকার ধারণ করে। তাণ্ডব চালায় ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ডের মত দেশে; চালায় খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ ভারতে সমান তালে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিবিসি (bbc.com, 23 january 2020) জানায়- করোনা ভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। করোনা ভাইরাস disease-২০১৯ এর অপর নাম ২০১৯- NCOV বা COVID-19। এটি এক ধরনের করোনা ভাইরাস, যার অ্যাক্রনিম (acronym= অন্য শব্দের আদ্যক্ষর দ্বারা গতিত শব্দ) হলো COVID-19; CO হলো করোনা, VI হলো ভাইরাস আর D Disease। আর ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯- এ প্রথম সংক্রমণ হয় বিধায় ১৯ সংখ্যাটি জুড়ে বসেছে COVID- এর সঙ্গে মিলে হয়েছে – COVID-১৯। করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি দেহে সংক্রমিত হতে পারে। করোনা ভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণী – গোষ্ঠীকে বোঝাই যেগুলো স্তন্যপয়ী প্রাণী এবং পাখীদেরকে আক্রান্ত করে। যেমন – এক দশক আগে SARS (Severe Acute Respiratory Syndrome); MARS (Middle Eastern Respiratory Syndrome), COVID-19। করোনা ভাইরাস শব্দটি লাতিন ভাষার করোনা থেকে উদ্ভুত, যার অর্থ ‘ মুকুট ‘ বা ‘ মালা ‘। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন প্রোটিনের কাঁটাগুলোর কারণে এটিকে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মত দেখায়। ভাইরাসের প্রোটিন সমৃদ্ধ থাকে যা ভাইরাল স্পাইক পেপ্লোমার দ্বারা এর অংহসহস্তান গঠন করে। A প্রোটিন সংক্রমিত টিস্যু বিনষ্ট করে। ভাইরাসটি ডাইমরফিসম রূপ প্রকাশ করে। ধারণা করা হয় ভাইরাসটি প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়।করোনা ভাইরাস এর বৈজ্ঞানিক নাম – অর্থকরণাভিরিনি (orthocoronavirinae); এটি করোনা ভিরিডি পরিবারের সদস্য। সকল প্রকার করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ (Most recent common ancester, MRCA) এর উৎপত্তি ঘটে আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্ব এ। এর পরে হাজার হাজার বছরে এর বহুরূপী বিবর্তন ঘটেছে বলে ধারণা করা হয় ( সোর্স: উইকিপিডিয়া)। করোনা ভাইরাস ১৯৬০ এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস ভাইরাস হিসেবে এটি প্রথম দেখা যায়।পরে সাধারণ সর্দি – হাচি – কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ( সার্স, মার্স) ভাইরাস পাওয়া যায়। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হলো COVID-19।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটিকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণার পর থেকে সমগ্র বিশ্বের মানুষ এক হয়ে করোনা মোকাবিলায় সংগ্রাম চালিয়ে ক্রমেই সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে বিশ্বের ইতিহাসে কখনো কখনো মানুষের জীবনযাত্রা বিবিধ কারণে বেহত হলেও জীবন – জীবিকার সংগ্রামের কাছে মানুষের অগ্রযাত্রা কখনো একেবারে থেমে যায়নি। তাই উচ্চকিত কণ্ঠে বলতে হয় – ‘ ভয় নেই হবে জয়, ঘাতকবেদি করোনা স্থায়ী নয় মানুষ সত্য – করোনা কে করবে জয়।