ফাহিম তার বন্ধু রবিনকে বলল, ‘তুই খালি বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করে থাক। মানুষের জীবনে ভাগ্যও তো আছে।’ রবিন জবাব দিল, ‘আরে ভাগ্য বলে কি আছে? বিজ্ঞানই সব।’ ফাহিম বলল, ‘ঠিক আছে। আমার যা বলার তো বলে ফেলেছি। কিন্তু তোমার ধারণাটা যে ভুল, একদিন তুই ওটার প্রমাণ পাবি।’ ফাহিম চলে গেল। রবিনের একমাত্র ছেলে জারিফ। জারিফের মা নেই। সেও তার বাবার মতো বিজ্ঞানে পারদর্শী। বাবার সাথে সবসময় বৈজ্ঞানিক কাজে লেগে থাকে। একদিন রবিন ঠিক করলে যে, সে তার ছেলেকে নিয়ে কানাডায় যাবে বিশ্রামের জন্য।ছেলেও রাজি। দিন কয়েক পর তারা কানাডায় আসল। দেশটি কত সুন্দর! বরফ রয়েছে চারিদিকে। রবিন ও তার ছেলে ভাবল জায়গাটি স্বর্গ থেকে কম নয়। ছোট ছোট শিশুরা বরফ নিয়ে খেলছে। জারিফেরও ইচ্ছা করল বরফ নিয়ে খেলতে। বাবা তাকে অনুমতি দিল বরফে খেলার জন্য। আহা কি মজা! জারিফ ভাবল যে, এমন সুখের দিন আর আসবে না। জারিফ দেখতে পেল, বরফের লেকে (যে লেক ঠাণ্ডায় উপরিভাগটি মসৃণ বরফে পরিণত হয়েছে) ছোট শিশুরা স্কেটিং করছে। জারিফ স্কেটিং করতে জানত। কিন্তু তার বাবা আগে পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমে পরিমাপ করে দেখল যে, এই বরফ জারিফের ওজন সইতে পারবে কিনা। কেননা বরফ ভেঙ্গে গেলে, জারিফ ঠাণ্ডা লেকে পড়ে মারা যাবে। রবিন হিসাব করে দেখল, বরফটি জারিফের ওজন সহজেই সইতে পারবে। রবিন বলল, ‘তুমি স্কেটিং কর। আমি পাশের রেস্তোরাঁ থেকে কিছু খেয়ে আসি। আমার খুব খিদে পেয়েছে। তোমার জন্যেও কিছু খাবার আনব।’ জারিফ বলল, ‘ঠিক আছে, বাবা।’ রবিন রেস্তোরাঁয় খেতে গেল। অন্যদিকে, জারিফ স্কেটিং করছে। খাওয়ার পর রবিন এসে দেখে লেকে অনেক ভিড় জমেছে। রবিন বেশ কৌতুহলী হলো। সে একজনকে জিজ্ঞেস করল,’What is going on in here(কি হচ্ছে এখানে?)’ লোকটি জবাব দিল, ‘The ice has been broken. Three children fell down in the lake.(বরফটি ভেঙ্গে পড়েছে। তিনজন শিশু লেকে পড়ে গিয়েছে।)’ রবিন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না। সে দৌড়ে গিয়ে বরফ ভাঙা স্থানে গেল। জারিফের জন্যে আনা খাবার কোথাও পড়ে গেল। রবিনের তা খেয়াল নেই। সেখানে সে দেখল, ফায়ার ব্রিগেড এর দুইজন কর্মী একজন শিশুকে বরফ থেকে উঠানোর চেষ্টা করছে। রবিন আর এ দৃশ্যটি দেখতে পারল না। কারণ এই শিশুটি হলো জারিফ। সে লেকে পড়ে যাওয়ায় বরফে জমে গিয়ে মারা গিয়েছে। রবিন অঝোরে কাঁদতে লাগল। রবিন ভাবল, ‘কিরে বরফটি ভেঙে যাওয়ার কথা ছিল না৷ বরফটি তো অনেক শক্ত ছিল৷ সেটি তো জারিফের ওজন ছাড়া কমপক্ষে পাঁচজন শিশুর ওজন সইতে পারে।’ ততক্ষণে জারিফের শরীর থেকে বরফ ভাঙা হয়ে গেছে। রবিন সেখান থেকে একটি বরফের টুকরো নিল। আর ছেলের কথা মনে করে স্রষ্টার কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘এ কি হলো? আমার ছেলেকে তুমি শেষ করে দিলে।’ রবিনের তখন ফাহিমের কথা মনে পড়ল। সে বুঝল – বিজ্ঞান সব নয়, ভাগ্য বলেও কিছু একটা আছে।