মহামারী | আনাস ফয়সাল | এসএসসি ব্যাচ ২০২৩

একটি পুরনো রেস্তোরাঁর রান্নাঘর। রান্নাঘরের কোণার একটি গর্তে জুলের বসবাস, জুলের সাথে থাকে তার বাব-মা, দাদা-দাদি সহ চার ভাইবোন। না জুল কোন মানুষ না, জুল ছোট্ট এক পিপড়ের নাম।

জুলের মিষ্টি খেতে বেশ শখ, তাই যেদিন এই রেস্তোরাঁয় মিষ্টি বানানো হয়, জুল সেদিন চুলার পাশেই বসে থাকে। মিষ্টির একটু ছিটে ফোটাই যেন স্বর্গসুখ জুলের জন্য। সপ্তাহের প্রত্যেক শুক্রবার তৈরি হয় ফিরনী, পায়েসসহ নানা মিষ্টি। জুল পুরো সপ্তাহ অধীর অপেক্ষায় থাকে এই শুক্রবারের।

আজ বৃহস্পতিবার, জুল খুব জলদিই তার সব কাজ শেষ করে নিয়েছে যাতে সে জলদি ঘুমিয়ে পড়তে পারে, কেননা কাল তো তার আনন্দের দিন, কোনভাবেই এই দিনের স্বল্প ক্ষণ ও যাতে ছুটে না যায়। জুল জলদি ঘুমিয়ে পড়লো।

কয়লা বসানো হয়েছে, পায়েস এর পাতিল বসানো হবে চুলায়। জুল বসে আছে চুলার পাশেই। কয়লায় আগুন ধরানোর আগে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়, আগুন ধরানোর জন্য। জুলের অবশ্যই এসব নিয়ে অমন মাথা ব্যাথা নেই। রেস্তোরাঁর বাবুর্চি রহিম মিয়া কেরোসিন ঢালছেন কয়লায়, হঠাৎ তার হাত ফসকে গেলো আর কেরোসিনের কিছু ফোঁটা গিয়ে পড়লো জুলের গায়ে। জুলের তো রীতিমতো বেশ রেগে উঠলো, রহিম মিয়া কে যেন আজ মেরেই ফেলবে। তবে জুল বেশ বিচক্ষণ, সে জানতো রাগ দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। কেরোসিনে পুরো শরীর ভিজে গিয়েছে এই অবস্থায় বসে থাকে সম্ভব না, বেশ অস্বস্থিকর। কয়লা বসানেোর স্থানের খুব পাশেই জুলদের ঘর। জুল খুব জলদিই তার ঘরের দিকে আগানো শুরু করলো। সে হাঁটছে এবং তার পিছে তার গায়ে হতে টপ টপ করে পড়ছে কেরোসিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে বাসায় পৌঁছালো, তাকে ভেজা দেখে সবাই অবাক, বাবা ও বেশ করে বকে দিলো। অন্যদিকে ম্যাচের কাঠিতে আগুন জালিয়ে কেরোসিনের উপর ফেলল রহিম মিয়া। মুহূর্তের মধ্যেই সেই আগুনে পুড়ে গেলো জুলের ঘর, সাথে পুড়ে গেলো ছোট্ট জুলের সেই ছোট্ট শরীর, আগুনে গলে গেল তার পরিবারের সকলেই। ঘুম ভেঙে গেল জুলের, তার মানে কি এই দুঃসহ ঘটনা স্বপ্ন ছিল, স্বস্তির এক দীর্ঘ শ্বাস ফেললো জুল। এখন কি সে মিষ্টি খেতে যাবে কি যাবে না? “ধুর,স্বপ্ন কি সত্যি হয়ে যাবে নাকি? এতকিছু ভাবার সময় হাতে নেই” এই ভেবে জুল দৌড়ে গেল চুলার পাশে। রহিম মিয়া কয়লা বসালেন, এরপর তিনি বোতল থেকে ঢালা শুরু করলেন কেরোসিন। হাত ফসকে গেলো তার, কেরোসিনের ফোঁটা গিয়ে পড়লো জুলের শরীরে। এবার জুল চিন্তায় পড়ে গেলো, ভয়ের সঞ্চার ঘটলো তার মনের। না এবার সে ঘরে যাবে না, পাশে থাকা এক পাটের বস্তায় নিজেকে শুকিয়ে নেয় সে। ঘরে গিয়ে নিয়ে এলো তার ভাইকে, দুইজনে মিলে গেলো চুলার পাশে, রহিম মিয়ার পায়েস বানানো শেষ। চুলার পাশেই পরে আছে পায়েসের ছিটেঁ ফোটাঁ, জুল এবং তার ভাই পিঠে করে বেশ কিছু ফোটা ঘরে নিয়ে আসলো, সবাই খুব আনন্দের সাথেই খেলো আর জুলের প্রশংসায় মেতে উঠলো। জুল তে আজ মহাখুশি।

মহামারীর এই সময়ে সবাই সতর্ক থাকার চেষ্টা করুন, কোয়ারেন্টিনসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি পালন করার চেষ্টা করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *