যে শহরে আদৌ শীতকালে সূর্যের দেখা মিলে না-শিহাব আহমেদ- এসএসসি ব্যাচ ২০২৩

আমেরিকার সবচেয়ে উত্তরের সবচেয়ে উত্তরের রাজ্য আলাস্কা এবং এর অন্যতম একটি শহর হচ্ছে উতকিয়াগভিক. শহরটি সুমেরুবৃত্ত থেকে 320 মাইল দূরে অবস্থিত. অনেকে “ব্যারো শহর” হিসেবেও চিনে এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের স্থানগুলোর একটি. বর্তমানে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের বসবাস এই এলাকা. গ্রীষ্মকালে মানুষ এখানে প্রায় দুই মাসের বেশি সময়(80 দিন) কোনো অন্ধকার কিংবা রাতের দেখা পান না. মে মাসে গড় তাপমাত্রা -4.9 সেলসিয়াস এবং জুন মাসে 2.056 সেলসিয়াস ডিগ্রি থাকে. জুলাই মাসে এখানে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস যেখানে তাপমাত্রা প্রায় 6 ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়. এমনকি জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রায় 24 দিনের জন্য তাপমাত্রা 0 নিচে থাকতে পারে. এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে 26.1 ডিগ্রি সেলসিয়াস যেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -48.9 ডিগ্রি সেলসিয়াস. বছরে প্রায় অধিকাংশ সময়ই তাপমাত্রা 0 ডিগ্রি এর নিচেই থাকে. তারপরও এই সময়টা তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক কারণ সামনে যে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য কোন সূর্যের আলো কিংবা ভিটামিন ডি পাবে না. এখন তাদের পড়তে হবে না সেই ভারী পশমী কাপড় কিংবা তীব্র শীতের ভয় থাকবে না. এক প্রকার বলাই যায় এটি হয়তো তাদের বছরের প্রিয় সময়. শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর এর শেষ থেকে প্রায় জানুয়ারি পর্যন্ত তারা আবার সূর্যের আলোর দেখা পাবে না. যেমন গত বছর 2020 সালে তারা 18 নভেম্বরের শেষ মুহূর্তের মত সূর্যকে দেখতে পায়. প্রায় 65 দিন এভাবে উতকিয়াগভিক এর বাসিন্দারা অন্ধকারে থাকে এবং 24 ঘন্টাই সূর্যের আলো তে থাকতে হয়. এই 65 দিনের দীর্ঘতম অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থাকে ”পোলার নাইট” বা মেরু-রাত বলা হয়. সাধারণত নভেম্বর মাসে 18 বা 19 বা 20 তারিখে দিয়ে তারা শেষবারের মতো সূর্যকে দেখতে পারে. এই সময় সূর্য উত্তর গোলার্ধের দিকে তীর্যকভাবে কিরণ দেয়; এবং যে স্থান বা শহর যত উত্তরে সেখানে সূর্যের আলো তত কম পড়ে এবং দিনের দৈর্ঘ্য তত কমতে থাকে. অর্থাৎ দিবা/ দিন এর পরিমান কমে যায় এবং রাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়. যেহেতু ব্যারো পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত স্থান-গুলোরমধ্যে অন্যতম একটি তাই দীর্ঘ এই 65 দিন সূর্য আলোর দেখা পাওয়া যায় না. মেরু রাতের(Polar Night) প্রথমার্ধের সময় গোধূলি(Twilight) প্রতিদিন কমতে থাকে এবং দক্ষিণায়নের সময় অর্থাৎ ডিসেম্বর 21 বা 22 তারিখের দিকে গোধূলি(Twilight) মাত্র তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়. এই সময় তাপমাত্রা -30 ডিগ্রি পর্যন্ত নিচে নামতে পারে. পরে আবার জানুয়ারি 27 বা 28 তারিখ এর দিকে ব্যারো শহরের বাসিন্দারা পুনরায় সূর্য দেখতে পায়. আর্টিক মহাসাগর এর পাশে হওয়ায় এই এলাকা পৃথিবীর সবচেয়ে মেঘাচ্ছন্ন জায়গা এবং বছরের প্রায় 50 শতাংশ সময়ে মেঘাচ্ছন্ন থাকে. একটি মজার ফ্যাট হচ্ছে, আলাস্কা এত উত্তরে যে এখান থেকে পৃথিবীর সম্পূর্ণ উল্টো দিকে গেলে আমরা এন্টার্কটিকাতে পৌঁছেযাব.আলাস্কা এর আয়তন আমেরিকার অন্যতম 7টি রাজ্যের(California,New-York,Texas,Florida,New-Jersey,Illinois,Pennsylvania) আয়তন এর সমান তবুও এর জনসংখ্যা এই রাজ্য গুলোর মোট জনসংখ্যা এর 0.5% মাত্র. এখানে 60 শতাংশ মানুষই স্থানীয় অর্থাৎ জন্ম থেকেই তার এখানে বসবাস করে আসছে. ব্যারো এর স্থানীয় “Prudhoe Bay” সবচেয়ে বেশি জমা তেল রয়েছে পুরো উত্তর আমেরিকায়. এই শহরের সাথে বাইরে কোথাও কোনো স্থানের সঙ্গে স্থলপথে যোগাযোগ নেই. একমাত্র বিমানের মাধ্যমেই এই শহর থেকে যাওয়া-আসা করা যায ও তাদের খাদ্য বাইরে থেকে বিমানের মাধ্যমে আসে. এই বিমানবন্দর তাদের একমাত্র যোগাযোগের উপায়. এখানে গাড়ি কিংবা বড় যানবাহন আনতে হলে ফেরি দিয়ে আনতে হয় . তাই এখানে খাদ্য ও এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি. যেখানে পুরো আমেরিকার গড় মাথাপিছু প্রায় 50 হাজার ডলার সেখানে ব্যারো শহরের গড় মাথাপিছু প্রায় 80 হাজার ডলার. বছর অধিকাংশ সময় যেহেতু বরফ গুলো জমা থাকে তাই এখানে বড় বড় জাহাজ কিংবা ফেরি আসতে পারে না. গ্রীষ্মকালে বরফ গুলো গলিত হয় পানি হওয়ায় এসব বড় বড় জাহাজ এবং ফেরি গুলো আসতে পারে. প্রতিবছর শীতকাল আসলেই এ অঞ্চলের বাসিন্দারা ভিটামিন ডি ও ভারী পোশাক সংগ্রহ করে এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দীর্ঘ 65 দিন সূর্যের আলো ছাড়া অন্ধকারে বসবাস করার অভিযান শুরু করে. তাই বলা যায় এটি পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্যতম শহরগুলোর মধ্যে একটি.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *