স্টুডেন্ট লাইফ পলিটিক্স | সাদমান রহমান নাবিল | এসএসসি ব্যাচ ২০২৩

আকিব এইবার ক্লাস ৮-এ উঠলো। ঢাকার এক সনামধন্য স্কুলে পড়ে ।

বাবা প্রকৌশলী। মায়ের ও সময় হয় না তার জন্য। তার দিকে নজর নেই কারো। আকিব বাব-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বড় বোন জন্মের সময়ই মারা যায়। তাই বাবা-মা তার কম যত্ন নেন না। কোন কিছুতেই ত্রুটি রাখেন না। সে ভালো স্টুডেন্ট। পিএসসি তে গোল্ডেন আর টেলেন্টপুলে বৃত্তি। ঘর ভর্তি সার্টিফিকেট আর ক্রেস্ট পড়ালেখার সাথে সাথে খেলাধূলায় ও বেশ ভালো । তবে ক্লাস ৮ এর গন্ডিতে পা রাখতেই যেন সে বদলাতে শুরু করলো। যেমন সকলেই তো বদলায়। কিন্তু আকিবের বদলানোটা অন্য ধরনের। যেই আকিব আগে মায়ের কথার উপর একটা শব্দ ও করতো না সেই এখন অবাধ্য, মায়ের কথার কোন শোনে না। যেই আকিব আগে মায়ের কথার বাইরে ঘরের বাইরে পা রাখতো না, সেই এখন বেশিরভাগ সময়ই থাকে বাসার বাইরে, বন্ধুদের সাথে, বড় ভাইদের সাথে। তার ফ্রেন্ড সার্কেল দিন দিন কেন যানি বড় হতেই চলেছে। একদিন এই সিনিয়রের বাড়তে একদিন ওই সিনিয়রের বাড়িতে তার ডাক পড়ে। বাবার চোখে এসব পরে না। তিনি বেশিরভাগ সময় অফিসেই থাকেন। রাতে ফিরেন ১২টায়। যাই হোক এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আকিবের দিন। জেএসসি পরীক্ষা ঘনীয়ে এসেছে। কোচিংএর পরীক্ষাগুলোতে তেমন আশানুরূপ ফল করতে পারেনি আকিব। মা চিন্তিত। বাবাকে জানালে বাবা যে রেগে যাবেন মা জানতো। তাই আর জানান নি। একদিন বাবার অফিসের কাজে ধানমন্ডী যান। দেখেন য়া—— বড় মিছিল বেশিরভাগই ছিল কলেজের পোলাপাইন। সবাই চিৎকার করে করে বলছে, “রাজু ভাই এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার পাশে, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু!!!”

দেখলো বাম পাশের থেকে কেমেরায় ভিডিও করছে আকিব। বাবার চোখে বিশ্বাস করতে পারছিল না। নাহ! এটা আকিবই। বাসায় রেগে মেগে এলেন বাবা। ডাক দিলেন “আকিবের মা, এই আকিবের মা!”

মা দৌড়ে এলেন। বাবা জিজ্ঞেস করলো আকিব কোথায়। মা বলল খেলতে গিয়েছে। বাবা বলল, “তোমার আদরের ছেলে পলিটিক্স করতেসে। আজকে বাসায় আসুক কুত্তার বাচ্চা। হাত-ঠেং ভেঙ্গে ধরাই দিব”। আকিব বাসায় আসলে অনেক মারে এবং বকা দেয় বাবা। তার বাসার বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। আকিব কিছুদিন ইগো দেখিয়ে খাবার-দাবার খেলো না। আকিবের ভিতরে ভিতরে আরেকটি অভ্যাস করেছিল। যা ছিল drug addiction। তো সে কিছুদিন পর মায়ের কাছে টাকা খুজলো, বলল চকলেট খাবে। মা টাকা না দিয়ে নিজে এনে দিলেন। সে মায়ের উপর রেগে মেগে আগুন মাকে বলল আমাকে টাকা দাও আমারটা আমিই আনবো। মা বলল, “নাহ! তোর বাইরে যাওয়া মানা” সে মাকে ধাক্কা মেরে টাকা ছিনিয়ে বেরিয়ে গেলো। এমন কাজ সে কয়েকবার করেছে। মা একদিন বাবাকে এই কথা বলেই দিল। বাবা বকা দিত মারতো কিন্তু তা আকিবের গায়েই লাগতো না। একদিন এমনই বাবা এসে বকা দিতে চাইলে মারতে চাইলে সে বাবাকেই চর মেরে বসলো, যা থেকে বাবা-মা খুবই লজ্জিত হন। আকিবের কোন রিগ্রেট ছিল না। মাফ চাওয়া যে উচিত তাও সে বুঝে না, পলিটিক্স আর drugs এর নেশায়। মা-বাবা যারা তাকে এতো যত্নে বড় করলো তাদের থেকে বড় ভাই-ব্রাদারস ইম্পর্টেন্ট এখন। বাবা কষ্টে suicide করে ফেললেন একদিন। আকিব অনাথ হওয়ার আগেই বাবা তার জন্য, তার জীবন চলানোর মতো টাকা রেখে যান। যা দিয়ে আকিব স্টুডেন্ট লাইফ অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু তার whole life যে স্টুডেন্ট পলিটিক্সে সে শেষ করেছে ফেলেছে। সেই বোধ তার হয়েছে বাবাকে হারানোর পর। আকিব মাফ চেয়েছিল বাবার কাছে মায়ের কাছে কিন্তু তখন বাবা দুনিয়াতে আর এক্সিস্ট করেন না। কথায় আছে Excess of anything is very bad, আদরে বাদোর হওয়া, আঙ্গুল থাকতে আঙ্গুলের মর্যাদা না দেওয়া। সব প্রবাদই খাটে আকিবের ক্ষেত্রে। তাই তো রবি ঠাকুর হয়তো বলেছিলেন, “ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।“

আকিব পলিটিক্সের নেশায় বাংলা প্রথম বইয়ের এই কথা পড়লেও হয়তো জীবনে বাস্তবায়ন করতে অক্ষম হয়েছে।

হুম! আকিব জেএসসিতে খারাপ করেছে, এটাই সাভাবিক। মা জানতো। মা এখন তার সাথে কথা বলেন না। যাক ক্লাস ৯ পর্যন্ত আকিবের মনে বাবা ভক্তি ভালোবাসা রিগ্রেট ফিলিং ডিপ্রেশন কষ্ট সব জমে ছিল। আসলে এই রাজনীতি পলিটিক্স এডিকশন এগুলো এভাবেই ছাড়া যায় না। কেউ চেষ্টা করেও ব্যর্থ আর কেউ লোকদেখানো চেষ্টা করে। তার উপর আকিবের মতো যুবক মানুষ। রক্ত গরম। কেমনে দূরে থাকে সে। আবার লাগলো এগুলোর পিছনে, মা জেনেও কিছু করতে পারে না। আকিব সেই আদরের ছেলে এখন অবাধ্য, গাজাখোর, রাস্তার গুণ্ডাদের সাথে চলাফেরা, মারামারি, পাবলিক স্কেম এ লিপ্ত। আসলেই বর্তমান যুগের ছেলেরা স্টুডেন্ট লাইফ পলিটিক্সের অর্থটাই পাল্টে দিয়েছে। আজকালের পলিটিক্সে নেগেটিভ রিয়েকশনই বেশি। আজকাল্কার পলিটিক্স মানেই গালে সিগারেট হাতে দিয়াশালাই পাশে মেয়ে সামনে বেনার আর পিছনে—-বড় ভাই। আর মা-বাবার শ্রম Dummy worker/runner এর মতো যার কোন মর্যাদা দুরের কথা মজুরি পর্যন্ত নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *