সময়টা ছিল রাত ১০টা বেজে ১৩মিনিট।“মা ডাকছে রাতের খাবার খেতে। পড়ালেখার গাড়িতে ব্রেক চেপে বই খাতা কলমের সঙ্গে পার্কিং করে টেবিলে রাখলাম। আমি নিরুপায়। উভয় সংকটে পড়া গেল। কী করি কী করি? খাবার টেবিলে গেলে এখন আর রাতের খাবারটা খেতেই পারব না। বাবার ঝারি খেয়েই পেট ফুল হইয়ে যাবে। পড়ার টেবিলেই বসে থাকি? আরো বকা খেতে হবে। তখন টেবিলে যাওয়ার আগেও বকা পরেও। আচ্ছা টেবিলেই যাই আমি। যা হবে দেখা যাবে। ধুর! কেন যে গণিতে পিথাগোরাস আর পাটিগণিতের মতো কলঙ্ক বাস করে।“ এই ভাবনায় মগ্ন হওয়ার সুযোগ না পেতেই মায়ের ডাক পেল হাসিব। ভয়ের ঢোক গিলে টেবিলের দিকে অগ্রসর হলো বেচারা। একটু দেরি করে ফেলেছে সে। টেবিলে সকলে তো বসেছে, হাসিবের জন্য খালি রইল বাবার পাশের চেয়ারটাই। হাসিব ভাবছে যেন মা ষড়যন্ত্র করেই তার জন্য বাবার পাশের চেয়ারটা বরাদ্দ রেখেছে। যাক Danger Zone এই বসতে হলো হাসিবের। আহা! কপালে দুঃখ আছে তা আর জানার কোনো বাকি ছিল না হাসিবের। খাবার খাওয়া শুরু করলো সবাই। “যাক! বাবার মনে হয় মাথা আজকে ঠাণ্ডা আছে”-এই ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার আগেই বাবা জিজ্ঞেস করলো, “আজকে না তোদের গণিত খাতা দেওয়ার কথা ছিল? পেয়েছিস?” নাহ, সত্যিটাই বলে দিল হাসিব বেচারা। বাবা বলল, “খাতা পেয়েছিস কিনা এই কথা আমার কেন জিজ্ঞেস করা লাগল? তুই নিজে কেন বললি না? আবার ফেল করেছিস নিশ্চয়ই?!” চুপ করে রইল হাসিব। Half-yearly পরীক্ষার পরের Pretest পরীক্ষার গণিত খাতা দিয়েছে। আর বরাবরের মতোই হাসিব সাহেব ফেল করেছেন। এ বিষয় আর নতুন না। পেয়েছে সে ৩০। “কিরে চুপ কেন? উত্তর দে?” হাসিব ভয়ের স্বরে বলল, “বাবা Next পরীক্ষায় ভালো করব।“
বাবা রেগে আগুন। “তো সেই নেক্সট পরীক্ষা আর আসবে না।” শুরু হলো বকাবকি। যাক রাত পার করলো সে। বাবার ঘোষণা হাসিবের খেলা বন্ধ। খেলার দুই ঘন্টায় যুক্ত হলো দুইজন সার। হাইয়ার মেথ ও কেমিস্ট্রি পড়াবে। আগে থেকেই ছিল ২জন। যাক মানসিক পীড়ায় দিন যায় হাসিবের। Test exam এ আরো খারাপ করলো বাবা প্রতিদিন চাপ দেয় গালাগাল দেয়। হাসিব ঘুমায় কম কাঁদে বেশি। এরপর স্কুলে আসলো এক নতুন ছেলে। নাম মুশফিক, পড়ালেখায় ভালো, একটু ঘাডতেড়া। কিছুদিনেই হাসিবের সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয় তার। সে আর হাসিব এক্সাথেই থাকত মুশফিক স্কুলে আসার পর থেকেই। মুশফিক হাসিবকে অনেক পজিটিভ ভাইবস ও মোটিভেশন দিত। হ্যাঁ! মুশফিকের সাথে থেকে হাসিবের পড়াশোনায় উন্নতি দেখা গেল। হাসিব আসতে আসতে পড়াশুনায় মন বসাতে পারছিল মুশফিকের সাথে সাথেই। এসএসসি কাছে আসলো তারা গ্রুপ স্টাডি করে আনন্দের ছলেই ভালো প্রিপারেশন নিল। কিন্তু এসএসসি এর সপ্তাহ আগেই মুশফিকের বাবআর বদলি হয়ে গেল। তারা চলে গেল বান্দরবন। আবার হাসিব মানসিক পীড়ায় পড়লো। কিন্তু মুশফিকের মনে পড়া তার জন্য ইমোশোনাল উইকনেস না হয়ে স্ট্রেংথ হয়ে দাড়ালো। মুশফিক হাসিবকে চিঠি লিখতো প্রায়ই আর বলতো এসএসসি তে তার ভালো করতেই হবে। আর হাসিবও ভালো করে। অনলাইনে হাসিবের রেজাল্ট পেয়েই মুশফিক হাসিবকে চিঠি পাঠায়। চিঠি পেয়েই কান্নায় ফেটে পড়ে হাসিব। হাসিব বলে “মুশফিক তুই পৃথিবীর বেস্ট টিচার যে একমাত্র ফ্রেন্ডলি পরাতে পারে আমার দেখা।” হয়তো তাদের আর দেখা হবে না। হয়তো মুশফিক ভুলে যাবে, তবে হাসিবের এসএসসি হাসিবের জীবনের BGS বইয়ের ছোটো-খাটো ইতিহাসের মতো হয়েই থাকবে আজীবন।