অগোছালো লেখনী(১)

রাত ঠিক পনে তিনটে। ঘড়ির টিক টিক শব্দ বইয়ে বহুবার পড়া হলেও এই প্রথম বোধহয় গভীরভাবে উপলব্ধি করা হলো। সাধারণত এত রাত জাগা হয় না। তবে আজকের দিনটির অভিজ্ঞতা অবশ্যই সাধারণ ছিল না। জীবনের কাটানো সবচেয়ে ভয়ংকর দিনসমূহের তালিকার শীর্ষে দিনটিকে স্থান দিলে, মোটেও মন্দ হয় না।

সর্বক্ষণ মানুষকে জ্ঞান আর অনুপ্রেরণা দেওয়ার পর আজ কেন যেন নিজেকে বেশ ভুল মনে হচ্ছে। হতাশা আর ব্যর্থতা কীভাবে একটি মানুষকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে দিতে পারে তার ক্ষণে ক্ষণে অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অসীম পথ পাড়ি দেওয়ার আশা নিয়ে থাকা সেই পথিক আজ ক্লান্ত, সে পরাজিত এক অদৃশ্য শত্রুর নিকট।
হতাশ হওয়াটা কী আসলেই যৌক্তিক না?

এই মহামারী চলাকালীন আর যাই হোক, বই ধরা হয়নি। মাস খানেক লেখে পড়েই পরীক্ষাটা দেয়া। প্রায়শ্চিত্ত নাকি সবচেয়ে বড় শাস্তি। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, অবহেলা করা আসলে মোটেও ঠিক হয়নি। রেজাল্ট নিয়ে অনেক প্রত্যাশা না থাকলে ও বাবা-মাকে দেখানোর যোগ্য কিছুর আশায় ছিলাম। রেজাল্ট যদিও অতটা খারাপ না। তবে আমি যেন তাদের তৃপ্ত করতে ব্যর্থ। তাদের ব্যক্ত সকল ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার বাণী থেকে তাই পরিলক্ষিত হয়। মা বাবা’র এই অতৃপ্তি একজন সন্তানের সকল আত্মবিশ্বাস ধূলিসাৎ করতে যথেষ্টই।
তবে সর্বনিকৃষ্টতম দিন হওয়ার জন্য এতটুকু যেন যথেষ্ট ছিল না।

রেজাল্ট খারাপ হওয়ার রাগটা বিনা কারণেই বন্ধুদের উপর ঝাড়লাম। যদি ও আমার মানসিক অবস্থা তাদের বোঝা দরকার ছিল বলে আমি এখনো মনে করি। তবে আমার ও এত রাগ দেখানো মোটেও উচিত হয়নি।

নিঃসন্দেহেই আমি জীবনের সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থ। সব চেষ্টাই দিনশেষে বিফল। তাহলে জীবনের এই গাড়ির পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? তবে কি আমি আসলেই ভুল ছিলাম? আত্মহত্যাই কি তবে সকল সমস্যার সমাধান? তবে কি না জানা সকল কথা, অজানাই রয়ে যাবে?

না। দমবার পাত্র আমি নয়। প্রতিকূল পরিস্থিতি হতে পলায়ন নয়, তার সম্মুখে মোকাবেলা করাই বীরত্ব। আবারো নিজেকে মিথ্যে সব আশ্বাস দিয়ে টিকে থাকতে হবে এই রণক্ষেত্রে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, সেল্ফ মোটিভেশান ইস দা বেস্ট মোটিভেশান। তবে বেস্ট মোটিভেশান পেতে আপত্তি কোথায়? যাই হোক এই দুশ্চিন্তার আর মাথায় নেয়া উচিত হবে না।

জানালার পাশে লাগানো ফুল গাছটার জীর্ণ এক অবস্থা, মৃত্যুক্ষণ গুনছিলো বললেই চলে। বেশ কিছুদিন পানি দেয়া না হলে ও গত তিন চারদিন যত্ন নেওয়ায় নতুন শাখা গজিয়েছে, পাতা বেরিয়েছে। আগে এই গাছে কি সুন্দর ফুল হতো। স্বার্থপরতার বশেই বন্ধুর যত্ন নেওয়া হয়নি।

আজকাল আযান বোধহয় খুব জলদিই দেয়। যদি ও শেষ কবে ফজরের আযান শুনেছি খেয়াল নেই। যাই নামাজটা পড়েই আসি। ইহকালে ব্যর্থ হলেও পরকালের জন্য বিনিয়োগ করা যাক। নামাজ পড়ে মুনাজাত করছিলাম, কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এই মায়া-ভালোবাসা অনেকটা নাটক-সিনেমার চিত্র মনে হলে ও আজকের এই হাতের স্পর্শ বেশ ব্যতিক্রম মনে হলো। কালকের ভুল বোধহয় বুঝতে পেরেছেন। বাবার এই শান্ত পরিস্থিতি দেখে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ফোনটা নেয়া যাক। সব ভালো যেন একসাথেই হয়। বন্ধুরা কালকের ভুল বুঝতে পেরেছে, কি একটা নাটকীয় অবস্থা। সবাই যেন একেকটা মনোবিজ্ঞানী, আমাকে কাউন্সেলিং করার চেষ্টা করছে। জীবন আসলেই ভালোবাসার। জীবন আসলেই সুন্দর।
যাক ঘুমিয়ে পড়ি, সারা রাত এক মুহুর্তের জন্য ও চোখ বন্ধ করা হয়নি।

ওহ হ্যাঁ। ঘুমানোর আগে সেই বন্ধুর কিছুটা যত্ন নেয়া যাক। দূর থেকে বোঝা না গেলে ও গাছে ছোট্টো এক ফুল ফুটেছে। ভোরের আকাশের সূর্য তীক্ষ্ণভাবে কিরণ দিচ্ছে। লাল এই মায়াবী ফুলের উপর সূর্যের আলো পড়ার এই চিত্র, আসলেই অসম্ভব সুন্দর।

~আনাস ফয়সাল
০৪.১২.২০২১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *